মহিলাদের কাজের স্বীকৃতি

একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নে মহিলাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মহিলারা যখন চাকরি করে তখন তাদের মূল্য থাকে। তারা যদি সংসারে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে তাদের সে কাজের স্বীকৃতি কি? এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করব।



একজন মহিলা সকাল থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কাজ করে। কিন্তু সংসারে তার এই কাজের মূল্য নেই। নেই তার কোন স্বীকৃতি। অথচ সে যদি চাকরি করে সে সংসারে তার ঠিকই মূল্য আছে। মতামত প্রকাশের গুরুত্ব আছে। আজকে নিজের কিছু কথা নিয়ে আলোচনা করব।

আমি একজন শিক্ষিত বেকার মানুষ। শিক্ষিত বেকার বলে অনেক অবহেলা। আমি সকাল থেকে শুরু করে রান্নাবান্না,সন্তান লালন পালন, হাঁস মুরগি পালন, গরু ছাগল পালন, গৃহস্থালির  সম্পূর্ণ কাজ করে থাকি। অথচ দিন শেষে শুনতে হয়" ‌‌সারাদিন বাড়িতে বসে কি কাজ কর"।

আমাদের সমাজে শৈশব থেকে মেয়েদের প্রতি যেভাবে বোঝানো হয় তারা সেটাকে ধারণ করে। ফলে মেয়ে ও ছেলের মধ্যে যে পার্থক্য ছোট থেকে মস্তিষ্কে বেঁধে যায় তা আজীবন থাকে। নারীরা যে ঘরের কাজের জন্যই জন্মগ্রহণ করছে এমন ভাবে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ। এমন কি পুরুষ তান্তিক সমাজের অনেক নারী তাদের বড় থাকতে পছন্দ করেন। তার নিজস্ব জগত সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।   পরিবারের সবার মধ্যে সৌহার্দ্য কমছে। নারীর কাজের মূল্যায়ন হওয়া জরুরি।। ঘরে নারীরা যে কাজগুলো করেন সেখানে যতটা সম্ভব পুরুষের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত যদি সব সময় সম্ভব না হয় তবুও নারী কাজের প্রতি শ্রদ্ধা করা উচিত।।

 বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় যে ,অধিকাংশ সময় পুরুষ বাইরেটা সামলায়।। এবং নারী যদি চাকরি করেন তবে তাকে একা হাতে ঘরে বাইরে সামাল দিতে হয়্। এতে করে একসময় মানসিকভাবে তারা ভেঙ্গে পড়েন। সবাইকে যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন কিনা,। বাচ্চাদের ঠিকমতো মানুষ করতে পারছেন কিনা এ সম্পর্কে নানা প্রশ্নে নারী জর্জরিত থাকেন। কিন্তু তাদের কাজের যোগ্য মূল্যায়ন করলে, পুরুষ যদি পাশে থাকে তবে নারীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি অনুভব করে।

আমরা জানি, কাজের যোগ্য মূল্যায়ন পেতে কার না ভালো লাগে? পুরুষ সারাদিন কাজ করে আসার পর তার দেখার জন্য নারী থাকে। কিন্তু একজন নারীকে দেখার  জন্য কখনো পুরুষ তার হাতটা বাড়িয়ে দেন না। এমনকি ছুটির দিনে  পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে সময় কাটান না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। দেখা যায় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে পার করেন। তবে নারীরা কখনো সংসারকে তুচ্ছ করে বাইরে জগতে বিচরণ করেন না। 

কিন্তু এই কাজগুলো নারীর জন্য বাধ্যতামূলক করেছে এই সমাজ। পুরুষের জন্য নয়। তারা বাইরে সামলে আসলে সাত খুন মাফ। তবুও নারীর কাজের কোন মূল্যায়ন নেই এই সমাজে। সবার দৃষ্টিভঙ্গি এমন যে, নারীরা মানুষ নয়। তাদের ক্লান্তি নেই, দুঃখ নেই। তারা পৃথিবীতে সবটা বিসর্জন দিতে এসেছে। দিন পাল্টাচ্ছে। এখনো যদি নারীকে তার প্রাপ্য মূল্যায়ন করা হয় তবে সমাজে এগিয়ে যাবে। নারীরা মুক্তি পাবে।

 পৃথিবীতে এমন কোন কাজ নেই যার ফলাফল নেই। কাজ সেটা ছোট হোক বা বড় হোক তার প্রভাব পড়বে। কিন্তু এমন অনেক কাজ আছে। যে কাজের ফলাফল ছাড়া দৈনন্দিন জীবন অচল হয়ে পড়ে মানুষের শারীরিক মানসিক সাংস্কৃতিক জীবন বিকশিত হওয়া তো দূরের কথা টিকিয়ে রাখায় কঠিন হয়ে পড়ে কিন্তু সে কাজ হল এমন ধরনের কাজ তার কোন স্বীকৃতি নেই,। যে তাদের মর্যাদা নেই এমনকি যে কাজকে তচ্ছিল্য করা হয় সব সময় আর যারা এই কাজ করেন তাদের কোন পারিশ্রমিক নেই। এই স্বীকৃতি বিহীন, মর্যাদা বিহীন, মজুরি বিহীন। কাজেরনাম গৃহস্থালির কাজ।। এসব কাজের ৮০ ভাগের বেশি করেন নারী। ক্লান্তিকর এই গৃহস্থালির কাজ ছাড়া সমাজ ও পরিবার টিকে থাকা অসম্ভব।

নারীর কাজ শুনলে মনের চোখে ভেসে ওঠে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ছবি। কিন্তু ইট ভাঙ্গা, মাটি কাটা, কৃষি কাজ করা,, শিল্প কারখানায় কাজ করা, শিক্ষকতা,, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, দ কৃষিবিদ অর্থনীতিবিদ গবেষক পাইলট ড্রাইভার পুলিশ-আর্মি এমন বহু পেশায় নারী আসছেন এগিয়ে। কিন্তু সব পেশায় থেকেও বা কোন পেশায় না থেকে যে কাজ তারা নীরবে করে যান তাহলে গৃহস্থালি কাজ।

বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা জরিপে দেখা গেছে, মজুরি বিহীন কাজে পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণ দিনে ৬.৪৬ঘন্টা বেশি। ২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্রুরো টাইম ইউজড সার্ভে রিপোর্টে বলা হয়েছে ১৫বছরের বেশি কর্মজীবীদের মধ্যে ঘরের বিভিন্ন কাজে পুরুষ দৈনিক 1.4 ঘন্টা। এবং নারী ব্যয় করেন ৩.৬ ঘন্টা। কর্মজীবী না হলে ঘরে নারী  সময়না দিলে 6.2 ঘন্টা এবং পুরুষ এক দশমিক দুই ঘন্টা এ ধরনের কাজে ব্যয় করে

যেকোনো শিশুকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তোমার বাবা কি করেন? সে হয়তো বলবে, কৃষিকাজ করেন, ব্যবসা বা চাকরি করেন ইত্যাদি। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় তোমার মা কি করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্তর হবে কিছু করেনা, ঘরের কাজ করেন। শিশুরা এটা শিখেছে আর বড়রা এসব শিখিয়েছেন যুগ যুগ ধরে।। কিন্তু বহুদিন ধরে একটা চিন্তা সমাজে থাকলে তা সত্যি হয়ে যায় না।, তাই এখন প্রশ্ন উঠেছে এবং উত্তর খোঁজা হচ্ছে নারীরা ঘরে যে কাজ করে তাকে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে না? যদি জাতীয় উৎপাদনের প্রভাব থাকে তবে গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি নেই কেন?? এর আর্থিক মূল্যকে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে দেশে পুরুষ জনসংখ্যা ৮৭ শতাংশ আর মূলক কাজের জড়িত। কিন্তু অর্থ উপার্জনকারী কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশ মাত্র ৩৬ শতাংশ। গৃহস্থালির কাজে বাকি যে ৬৪ শতাংশ নিয়োজিত নারীর শ্রমশক্তি তাকে হিসেবে ধরা হয় না। নারীর শ্রমের সংসারে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার মূল্য না ধরায় জিডিপিতেও আসছে না নারীর অবদানের চিত্র।

শেষ কথা:

এত তথ্যবহুল আলোচনার  পরও স্বামীদের কি এ কথার অবসান হবে না "সারাদিন বাসায় বসে কি করো"


 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪